শেখ হাসিনা হয়ে উঠেছেন সুপার স্টেট বা “অতি রাষ্ট্র”। এই অতিরাষ্ট্রকে গড়ে তোলার জন্যই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙেচুরে দেয়া হয়েছে। ফ্যাসিবাদে রাষ্ট্র ধ্বংস হয়না, কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিবাদের একটা কৌতুহল উদ্দিপক দিক হচ্ছে শেখ হাসিনার অতিরাষ্ট্র হয়ে ওঠা। শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবও হয়ে উঠেছিলেন অতিরাষ্ট্র। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান নয় শেখ মুজিবের ইচ্ছাতেই সবকিছু পরিচালিত হতো। চোরাচালান ও দুর্নীতী বিরোধী অভিযানের সময় যখন শেখ মুজিব সেনাবাহিনী নামিয়েছিলেন তখন শেখ মুজিব নিজেই সামরিক বাহিনীকে বলতেন যেন সামরিক অভিযানে ধৃত অপরাধীকে ছেড়ে দেয়া হয়। রাষ্ট্র, পার্টি, শাসন, সরকার সব একাকার হয়ে এক অদ্ভুত কতৃত্ব গড়ে উঠেছিলো। নিজের পছন্দ, ইচ্ছা ও অনিচ্ছায় পরিচালিত হতো সবকিছু। নিজে যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিচ্ছেন, যাকে ইচ্ছা মাফ করছেন, যাকে ইচ্ছা ধরছেন, যাকে ইচ্ছা বিচার বহির্ভুতভাবে হত্যা করছেন। জনগন শেখ মুজিবের সন্মোহনী শক্তিতে বুঁদ থাকাকেই শেখ মুজিব নিজের বৈধতার উৎস বলে মনে করতেন।
শেখ হাসিনা তার পিতার সন্মোহনী শক্তিকেই তার অতিরাষ্ট্র হয়ে উঠার বৈধতার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছিলো। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন গড়ে উঠলো এবং আওয়ামী লীগ সরকার যখন কোন যুক্তিতেই রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার যৌক্তিকতা দিতে পারছিলেন না তখন তারা যুক্তি হিসেবে এনেছিলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা নিশ্চয়ই সুন্দরবনের ক্ষতি হয় এমন কাজ করবেন না। অদ্ভুত কথা। সেই থেকে শুরু আর তারপর থেকেই সবকিছুতেই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কাহিনি শুরু হলো। নর্দমার ময়লা থেকে শুরু করে সিনেমার নায়িকার বিয়ে ভেঙে যাওয়া ঠেকানো পর্যন্ত সবকিছুতেই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা শুরু হলো। এমনকি ক্রিকেটারদেরকেও নাকি ম্যাচ জেতার জন্য টিপস দেন তিনি। খেলায় যেন বাংলাদেশ টিম জেতে সেইজন্য নাকি তার দোয়াদরুদ কাজে লাগে। একজন আওয়ামী সংসদ সদস্য তো বলেই ফেলেছিলো সংসদে দাঁড়িয়ে যে শেখ হাসিনা আউলিয়ার পর্যায়ে চলে গেছেন।
একদিকে অতিরাষ্ট্র শেখ হাসিনা আরেকদিকে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখার গণ আকাংখার লড়াই। এই লড়াইয়ের পরিণতিই ঠিক করে দেবে ভবিষ্যত বাংলাদেশের গন্তব্য। এই লড়াইয়ে গণ আকাংখা পরাজিত হলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটাও শেষ হয়ে যাবে।